-বাবা, ঐ গলিটার ভিতর দিয়ে কোথায় যাওয়া যায়?
-ঐ গলিটা কোনো পথ নয়। ঐ গলিটার ভিতরে গেলে মানুষ হারিয়ে যায়।
-কিন্তু…
-কিন্তু নয় তাড়াতাড়ি পা চালাও, বাড়ি পৌঁছাতে হবে।
লাল গলিটা। লাল রঙ আমাদের খুব টানে। খুব। তাই না!
বাবার সঙ্গে সেই কথা গুলোর পর দশটা বছর কেটে গেছে… এখন দশম শ্রেণী। সেদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় একটা ঝাঁপিয়ে পড়া অন্ধকার, সব যেন শূন্য করে দিলো।
যখন জ্ঞান এলো, চোখে পড়লো একটা অদ্ভুত রঙচঙে ঘর তাতে সেই লাল আলো… কি মায়াবি… আর কতো গুলো রঙ মাখা মুখোশ… না মুখ! বোঝা যায় না ভালো করে! সব ঝাপসা। সবাই ওখানে মহিলা, এটা বোঝা যায়।
‘কে তোমরা? এটা কোন জায়গা?’
-‘মেলা ফ্যাচ-ফ্যাচ না করে তৈরি হ, লোক পাটাচ্ছি’
মুখে গোজা একদলা পান, বাঁকা ঠোঁটটার কোণা দিয়ে ছিটকে আসছে কথা গুলো, অচেনা মুখ,এরকম অভিব্যক্তির সাথে সে পরিচিত নয়।মাথাটা এখনো ঝিমঝিম করছে। অন্য আরেকটা কণ্ঠস্বর পরিবেশের ছন্দপতন করলো।
-‘এই, তোরা ঘরটা খালি করতো, নতুন পাখিকে দেকি একবার বালোকরে।’ কথা গুলো যার থেকে এলো সে হলুদ শাড়ি পড়েছে। মাঝবয়েসী বাকিদের তুলনায় বড়ো। মুখ গুলো এখনও কেমন ঝাপসা লাগছে। তার কথায় সবাই বেরিয়ে গেলো।
দরজা বন্ধ হলো। এখন ঘরে শুধু হলুদ শাড়ি পড়া মহিলা।
-‘পালিয়ে যা! এক্কুনি পালা! বাজার নষ্ট করতে এসেছিস না!’ দাঁতে দাঁত চেপে রেগে রেগে খুব চাপা স্বরে বললো। একটু থেমে, ‘বয়েস কতো?’
-‘ষোলো। আমি বাড়ি যাবো! আমায় বাড়ি নিয়ে চলো!’
বিরক্ত হয়ে বললো, ‘উঃ! এপথে এচিলিস কেন!’ আবার নিচু গলায় বলে উঠলো,’শোন, যা বলছি তাই কর…’
ঘরের আলমারি থেকে বেরহলো হরেক রঙের শাড়ি, সব রঙের উপর একটা লালচে আভা পড়েছে, তাই হারিয়ে গেছে আসল রঙ। গিঁট বেঁধে বেঁধে জানলার শিকের সাথে বাঁধলো। নিজে বেরিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো সেই জানলার নিচে, পিছনের রাস্তায়, মেয়েটা শাড়ি বেয়ে নেমে গেলো।
মহিলা একটা গলি দিয়ে বের করলো মেয়েটাকে, ছুড়ে ফেলে দিলো ঝকঝকে একটা রাস্তায়। সেই রাস্তাটা। সাদা ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ঝলমল করছে পথঘাট। চেনা রাস্তা। মেয়েটা পিছন ফিরে একবার তাকালো যে গলি দিয়ে তাকে হলুদ শাড়ি পরা নারী বের করে দিয়েছে সেই গলিটার দিকে। গলিটা সেই লাল আলোর রাংতায় মোড়া। একই ভাবে মায়াজাল বিস্তার করছে। তাকে বের করে দিয়ে হলুদ শাড়ির নারী মূর্তি ফিরে যাচ্ছে সেই লাল গলির ভিতরে। মায়া গলি। মেয়েটা দেখলো, নারীর হলুদ শাড়ির আঁচল ক্রমশ মিলিয়ে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে লাল আলোর ভিতর। লাল আলোটা যেন গিলতে পারে অন্য রঙকে, এমনই মায়া তার।
সেই লাল আলো, যার ভিতর হারিয়ে যায় অনেক রঙ, অনেক মানুষ আর অনেক অনেক রঙিন শাড়ি।